এসো বৃষ্টি, অনগাত শীতের দিন
কবিতা | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
কত দীর্ঘ এই রজনী
শহরের ধুলোয় রঙিন আলোক-
আজ আর কোথাও যাব না
একটি খোঁয়ারি জীবনের পাশে
কে যেন চুপচাপ বসে থাকে শুধু।
জীবন তো এমন—তোমার আসা-যাওয়া পথের বাঁকে এক নীমিলিত সন্ধ্যা।
তোমার চোখের জলে ভেসে যাওয়া আমাদের দুঃখ।
২.
তবু কেন এভাবে কথা বলো—
একটা কথার পিঠে কতরকম কথা থেকে যায়
একটা গানের সুরে কতটা বিবর্ণ আবহ
একটা বাগান ঘিরে জীবনের সমস্ত কৌতুহল
এখন না কি শরতকাল—
কে যেন তোমার চুলের বনে পরিয়ে দিচ্ছে কাশফুলের দীঘল পোশাক।
কিন্তু জেনে রেখো—
এই পৃথিবীতে পুনর্বার যা ঘটে যায়
তৃতীয় সময়ের কাছে তা একটি নামফলক।
৩.
কেন এমন ভুলে যাওয়া অসুখের মতন
দূরের কথাগুলো উড়ে আসে—
আমার ভাবনার কোলজুড়ে সারাদিন
তোমার অতীত সময়ের দুর্ধর্ষ নীরবতা
সকল রোগজীর্ণ শরীরের ভেতর
ডোম অন্ধকারের বীভৎস শব্দ লুকিয়ে থাকে
যে সরলতার সূত্র জেনে তুমি বিদিকে এগিয়ে চলেছো
সেখান থেকেই উদিত হচ্ছে আগামীকালের সূর্য
সেখান থেকেই নূতন কোনো জনপদের সূচনা
এলেমেলো এতসব বাক্যের সাথে আমার সংসার
অথচ কোনো শব্দ নির্মানের শক্তি নেই,
জীবনের এইসব জটিলতার পাশে
তুমি কি এটুকু ছায়া হয়ে আসবে না কোনোদিন!
৪.
সবকিছু ভুলে যেতে হয়—
আমি তো জানি
যে যেভাবে হেঁটে যায়
সে সেভাবেই ফিরে আসে একদিন
শুধু থেকে যায় স্মৃতির লণ্ঠন—কথার আঘাত
কোথাও না কোথাও কুয়োতলার মতো ষড়যন্ত্র
শরীরের ভিতর ভাসাভাসা অন্ধকার।
৫.
ভালোবাসা কাকে বলে—
আজ, যদি কেউ প্রশ্ন করে
আমি জানিয়ে দিব তার প্রকার এবং তরঙ্গময় আবহের কথা
কারো চোখের পাতা কেঁপে ওঠা ভালো লেগে গেলে
কারো অভিমানী কণ্ঠস্বর ভালো লেগে গেলে
যাকে দেখার জন্য প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য নুন-পান্তার মতো সহজলভ্য হয়ে ওঠে
যেন ভালোবাসা ভেতর থেকে উতরে ওঠা আবেগ,
উচাটন দেহের উত্তাপ।
আর যারা নিঃসঙ্গ—
শুক্রবারের একাকি যাপনের বিকেল
যার কেউ নেই, তার আছে সমুদ্র
একটি শুক্রবারের উল্লাস
চিরকাল গৃহত্যাগী বাসনার কাছে নতজানু জীবন
এভাবেই ফুরিয়ে যায় দিন—জাগো
তোমার কাছেই ফিরে আসে শুক্রবার সন্ধ্যা।
৬.
জীবনের অনুষঙ্গ বলতে কি—
পায়ে পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা জবুথবু বৃষ্টির দিন
আজ তুমি এসেছিলে—আমি বিছানা ছেড়ে কোথাও যাইনি দেখো।
যেন বৃষ্টি এলে পাপের সমস্ত খাজানা খুলে যায়।
আরও পড়ুন
এক অজানা অভিমুখে
কবিতা | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩এ কেমন—
পাথরের গায়ে লেখা কবিতা
সমস্ত জ্যামিতিক পথগুলো
বিধ্বংসী জীবনের পাশে ধীর পায়ে বসে আছে
তথাগতি বৃষ্টি আর এলো না
সকল সুখকর স্মৃতি মুছে গেল
একটা ছাইরঙা প্রচ্ছদে জমে থাকা ধুলো
উড়ে গেল এভাবে
আমার ঠোঁটের চারপাশে ভীষণ তিয়াসা
আজ এই গুমোট রাতের ভেতর
চুপসে যায় আরও গভীর নীরবতা—
কারা যেন বলে
জীবন যেভাবে চলিয়া যায়, তাহাই শ্রী শ্রীমতী
কিন্তু সকলের লালসা কেবল একজন-কে ঘিরে
যার চোখে কোনো ভয় নেই
যার চোখে শুধু জীবনের সরলতা।
আমি আসি এবার,
বিদায় বন্ধু, বিদায়—
আমাদের দেখা হবে কবিতার ভুবনে
কালো পোশাক পরে আমি তোমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলব
এই সেই মানুষ—
যে আমার বেঁচে থাকার পাশে খুব করুণার চোখে তাকিয়ে ছিল।
*
এক অজানা অভিমুখে
ঘুম ভেঙে যায়
চতুর্পাশে শূন্যতা
কেবল জীবনের জটিল সমীকরণ
আমার ঘুম আসে না
সারাদিন ভাবি
সারারাত মস্তিষ্কের যন্ত্রণা
আমাকে বিরহী নদীর পাড়ে ফেলে এসো
মানুষের পাশে থেকেও আমি খুব একা
এই দুর্দর্শ সময়ের কোল-ঘেঁষে বেঁচে থাকা অন্যায়।
একটা বিন্দুর কাছে ক্রমশ আরেকটা বিন্দু এবং অন্যান্য কবিতা
কবিতা | ৩১ আগস্ট ২০২৩মা—
তোমার কবরের পাশে
শত-শত নয়নতারা ফুটে আছে
খামোশ অন্ধকারে চুপসে থাকা সাদা মেঘ
আমার কান্না
পাতা ঝরে যায়
ফুল ফুটে যায়
আর আমি প্রতিদিন একা হয়ে যাই—মা
তুমি ছাড়া কোনো বন্ধু নেই
পথে-পথে, পাহাড়ি গিরিখাতে আমি একা একা হেঁটে আসি
বাঁশঝাড়ের পাতা দোলে
মনে পড়ে তোমার কথা
নানুবাড়ির শৈশব
বড় খালা,
মেজো খালাদের বাড়িজুড়ে তোমার কৈশোর
সমস্ত এফোঁড়-ওফোঁড় স্মৃতিকথার দিন
আমার মনে আছে
তোমার আঙুল ছুঁয়ে সেইসব ঘুমন্ত রাতেরা
ভোরের আকাশে ঘোমটা-পরা হাওয়ারা
কেমন করে এসেছিল—
একটা দুপুর ক্ষয় হয়ে যেতে যেতে
আমার আরও মনে পড়ে
তুমি শেষদিন বলেছিলে
‘ভালো কইরা থাইকো বাবা’
পৃথিবীতে মানুষ একা আসে
একা হয়েই ফিরে যায়
আমি তোমাকে ভুলে থাকতে চাই
তোমার স্মৃতিরা আমাকে ঘুমোতে দেয় না
আমার পাঁজর ফেঁপে ক্রমাগত থির বিষন্নতা...
*
একটা জীবনের কাছে
আরেকটা জীবন
দীর্ণ পায়চারির শব্দ
ক্রমশ এগিয়ে আসে
বহুরন্ধ্র ঘেঁষে ছেঁড়া ছেঁড়া আলো
ঘনীভূত বেদনার নীলাকাশ
জানো—
‘ভালো থেকো’ বলে যাওয়া মানুষ
কোনোদিন ফিরে আসে না
থমকে থাকে সেদিনের সমস্ত আকাশ
আমি ফিরে আসব—
একটা বিন্দুর কাছে ক্রমশ আরেকটা বিন্দু
একটা পাতার পিঠে আরেকটা সবুজ
আমার চোখের নিচে কালো-কালো নির্ঘুম রাত।
*
আজ আকাশে নীল নেই
পাতাদের হাওয়া নেই কোথাও
বৃষ্টির কোনো শব্দ নেই
তাই বলে থমকে নেই কিছু
আমাকে ভালোবাসা মানুষেরা দূরে সরে যায়
একদিন নীরবে চলে যাব
কতদিন ভাবি
কতদিন পেয়ারা বাগান ফেলে চলে যাই
কিন্তু ফিরে আসতে হয়
বাপ-দাদার ভিটেমাটি
শৈশব-কৈশোরের এইসব স্মৃতিছায়া
আমাকে বারণ করে রাখে
পুরোনো ভয় নতুন করে গজিয়ে ওঠে
জানো!
আমার আর পৃথিবীর কোথাও ভালো লাগে না।
খড়কুটো জীবনের চেয়ে সবুজ অরণ্য
কবিতা | ৩১ আগস্ট ২০২৩কথার মাঝে কথা ফুরিয়ে এলো
অথচ কত-কত কথা ছিল
প্রত্যুত্তরের পাশে একটা গোমড়া মুখ
পথের বাঁকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ মেঘ
এইসব অনেকদিন আগেকার ধূর্ততা
তারপর এভাবেই ভেবেছি
খড়কুটো জীবনের চেয়ে সবুজ অরণ্য
পথের পাশে অদ্ভুত একটা গাছ
আমার ভাবনাদের বনজুড়ে ভীষণ কুয়াশারেখা সময়।
*
কিচ্ছু বলো না তুমি—
চুপিচুপি রাত্রির গোপনীয়তা গাঢ় হয়
আমার ভেতর প্রেম জেগে ওঠে
যদি রাত্রিকে ফালি ফালি করে কাটা যায়
পৃথিবীর সকল স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যাবে
তোমার আঁচলজুড়ে একটা অনাগত মায়ের ঘ্রাণ—
আমার খুব ইচ্ছে জাগে
স্বপ্নের আদলে গড়ে উঠবে দূরের দিগন্ত
*
এইযে এই নীল কান্নার পাশে
আমার এমন উদাসীন রাত
কেউ বোঝেনি
কীভাবে, কেমন করে আলগোছে
রাতের পায়রাগুলো নিস্তব্ধ কুয়াশায় ছেয়ে যায়
মনে হয়—সব কথা
সকল অভিমান আজ আকাশের নীল
কেবলই নীলে-নীলে নীলের পাশে
অদ্ভুত, সব অদ্ভুত কান্নার সমাগম।
*
আমার হৃদয়ে বেড়ে উঠছে গোপন যত প্রেম
সন্ধ্যা হলে একটা অতিকায় নিঃসঙ্গ পাথর চেপে বসে বুকে—
বেদনারা ডানা ঝাপটাতে থাকে অধীর অপেক্ষায়
কেননা—যাবতীয় মুখরতা কোথায় যেন ফুরিয়ে গেছে
আমি ছুটে চলি ছায়াহীন আলোর কাছে
রাতের পেলবতা যেখানে নিশ্চুপ।