আতিক ফারুক

লেখক

এক অজানা অভিমুখে

এক অজানা অভিমুখে

কবিতা | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এ কেমন—
পাথরের গায়ে লেখা কবিতা
সমস্ত জ্যামিতিক পথগুলো
বিধ্বংসী জীবনের পাশে ধীর পায়ে বসে আছে
তথাগতি বৃষ্টি আর এলো না
সকল সুখকর স্মৃতি মুছে গেল
একটা ছাইরঙা প্রচ্ছদে জমে থাকা ধুলো
উড়ে গেল এভাবে
আমার ঠোঁটের চারপাশে ভীষণ তিয়াসা
আজ এই গুমোট রাতের ভেতর
চুপসে যায় আরও গভীর নীরবতা—

কারা যেন বলে
জীবন যেভাবে চলিয়া যায়, তাহাই শ্রী শ্রীমতী
কিন্তু সকলের লালসা কেবল একজন-কে ঘিরে
যার চোখে কোনো ভয় নেই
যার চোখে শুধু জীবনের সরলতা।
আমি আসি এবার,
বিদায় বন্ধু, বিদায়—
আমাদের দেখা হবে কবিতার ভুবনে
কালো পোশাক পরে আমি তোমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলব
এই সেই মানুষ—
যে আমার বেঁচে থাকার পাশে খুব করুণার চোখে তাকিয়ে ছিল।

*
এক অজানা অভিমুখে
ঘুম ভেঙে যায়
চতুর্পাশে শূন্যতা
কেবল জীবনের জটিল সমীকরণ
আমার ঘুম আসে না
সারাদিন ভাবি
সারারাত মস্তিষ্কের যন্ত্রণা
আমাকে বিরহী নদীর পাড়ে ফেলে এসো
মানুষের পাশে থেকেও আমি খুব একা
এই দুর্দর্শ সময়ের কোল-ঘেঁষে বেঁচে থাকা অন্যায়।

আরও পড়ুন

একটা বিন্দুর কাছে ক্রমশ আরেকটা বিন্দু এবং অন্যান্য কবিতা

একটা বিন্দুর কাছে ক্রমশ আরেকটা বিন্দু এবং অন্যান্য কবিতা

কবিতা | ৩১ আগস্ট ২০২৩

মা—
তোমার কবরের পাশে
শত-শত নয়নতারা ফুটে আছে
খামোশ অন্ধকারে চুপসে থাকা সাদা মেঘ
আমার কান্না
পাতা ঝরে যায়
ফুল ফুটে যায়
আর আমি প্রতিদিন একা হয়ে যাই—মা
তুমি ছাড়া কোনো বন্ধু নেই
পথে-পথে, পাহাড়ি গিরিখাতে আমি একা একা হেঁটে আসি
বাঁশঝাড়ের পাতা দোলে
মনে পড়ে তোমার কথা
নানুবাড়ির শৈশব
বড় খালা,
মেজো খালাদের বাড়িজুড়ে তোমার কৈশোর
সমস্ত এফোঁড়-ওফোঁড় স্মৃতিকথার দিন
আমার মনে আছে
তোমার আঙুল ছুঁয়ে সেইসব ঘুমন্ত রাতেরা
ভোরের আকাশে ঘোমটা-পরা হাওয়ারা
কেমন করে এসেছিল—
একটা দুপুর ক্ষয় হয়ে যেতে যেতে
আমার আরও মনে পড়ে
তুমি শেষদিন বলেছিলে
‘ভালো কইরা থাইকো বাবা’
পৃথিবীতে মানুষ একা আসে
একা হয়েই ফিরে যায়
আমি তোমাকে ভুলে থাকতে চাই
তোমার স্মৃতিরা আমাকে ঘুমোতে দেয় না
আমার পাঁজর ফেঁপে ক্রমাগত থির বিষন্নতা...

*

একটা জীবনের কাছে
আরেকটা জীবন
দীর্ণ পায়চারির শব্দ
ক্রমশ এগিয়ে আসে
বহুরন্ধ্র ঘেঁষে ছেঁড়া ছেঁড়া আলো
ঘনীভূত বেদনার নীলাকাশ
জানো—
‘ভালো থেকো’ বলে যাওয়া মানুষ
কোনোদিন ফিরে আসে না
থমকে থাকে সেদিনের সমস্ত আকাশ
আমি ফিরে আসব—
একটা বিন্দুর কাছে ক্রমশ আরেকটা বিন্দু
একটা পাতার পিঠে আরেকটা সবুজ
আমার চোখের নিচে কালো-কালো নির্ঘুম রাত।

*

আজ আকাশে নীল নেই
পাতাদের হাওয়া নেই কোথাও
বৃষ্টির কোনো শব্দ নেই
তাই বলে থমকে নেই কিছু
আমাকে ভালোবাসা মানুষেরা দূরে সরে যায়
একদিন নীরবে চলে যাব
কতদিন ভাবি
কতদিন পেয়ারা বাগান ফেলে চলে যাই
কিন্তু ফিরে আসতে হয়
বাপ-দাদার ভিটেমাটি
শৈশব-কৈশোরের এইসব স্মৃতিছায়া
আমাকে বারণ করে রাখে
পুরোনো ভয় নতুন করে গজিয়ে ওঠে
জানো!
আমার আর পৃথিবীর কোথাও ভালো লাগে না।

পুরোটা পড়ুন
খড়কুটো জীবনের চেয়ে সবুজ অরণ্য

খড়কুটো জীবনের চেয়ে সবুজ অরণ্য

কবিতা | ৩১ আগস্ট ২০২৩

কথার মাঝে কথা ফুরিয়ে এলো
অথচ কত-কত কথা ছিল
প্রত্যুত্তরের পাশে একটা গোমড়া মুখ
পথের বাঁকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ মেঘ
এইসব অনেকদিন আগেকার ধূর্ততা
তারপর এভাবেই ভেবেছি
খড়কুটো জীবনের চেয়ে সবুজ অরণ্য
পথের পাশে অদ্ভুত একটা গাছ
আমার ভাবনাদের বনজুড়ে ভীষণ কুয়াশারেখা সময়।

*

কিচ্ছু বলো না তুমি—
চুপিচুপি রাত্রির গোপনীয়তা গাঢ় হয়
আমার ভেতর প্রেম জেগে ওঠে
যদি রাত্রিকে ফালি ফালি করে কাটা যায়
পৃথিবীর সকল স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যাবে
তোমার আঁচলজুড়ে একটা অনাগত মায়ের ঘ্রাণ—
আমার খুব ইচ্ছে জাগে
স্বপ্নের আদলে গড়ে উঠবে দূরের দিগন্ত

*

এইযে এই নীল কান্নার পাশে
আমার এমন উদাসীন রাত
কেউ বোঝেনি
কীভাবে, কেমন করে আলগোছে
রাতের পায়রাগুলো নিস্তব্ধ কুয়াশায় ছেয়ে যায়
মনে হয়—সব কথা
সকল অভিমান আজ আকাশের নীল
কেবলই নীলে-নীলে নীলের পাশে
অদ্ভুত, সব অদ্ভুত কান্নার সমাগম।

*

আমার হৃদয়ে বেড়ে উঠছে গোপন যত প্রেম
সন্ধ্যা হলে একটা অতিকায় নিঃসঙ্গ পাথর চেপে বসে বুকে—
বেদনারা ডানা ঝাপটাতে থাকে অধীর অপেক্ষায়
কেননা—যাবতীয় মুখরতা কোথায় যেন ফুরিয়ে গেছে
আমি ছুটে চলি ছায়াহীন আলোর কাছে
রাতের পেলবতা যেখানে নিশ্চুপ।

পুরোটা পড়ুন
তোমাকে তোমার প্রতিলিপির পাশে

তোমাকে তোমার প্রতিলিপির পাশে

কবিতা | ৩১ আগস্ট ২০২৩

তোমাকে—
তোমার প্রতিলিপির পাশে
হঠাৎ মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠলো
একটা দগ্ধ তরুণের মৃত্যু হলো
না—তার জীবন শেষ হয়নি
তার স্বপ্ন মৃত্যুর মতো বিনাশ হয়ে গেছে
আজ কী-যে হলো
তোমাকে তোমার অনেক কথা বলা হয়নি
কিন্তু বলতে হচ্ছে জীবনের কথা
কাঁটাতারে ঝুলে থাকা একটা নষ্ট জীবন
ক্ষয় হওয়া, ঘুণেধরা বিবস্ত্র একটা কাল
আরও সুন্দরতম একটা নদীর কাছাকাছি
খুব বেঁচে থাকতে চেয়েছি আমি

*

তুমি ভুল বুঝে ফেলে যাও
দুপুরের সকল ছায়ায়
আমার ছোটো-ছোটো স্বপ্নের মহাকাশ
নিরালম্ব জীবনের হাতল খুলে চেয়ে আছি
জানি—পৃথিবীর সবাই যদিও খুব ক্লান্ত
কিন্তু একটামাত্র বৃক্ষ
আমাকে কখনো একা করেনি
আমার ভেতরের এক লহমা দুঃখের কথাও যে জানে
তার নাম মধ্য দুপুরের উদাসীন বাঁশঝাড়
কী বলতে কী হয়ে যায়—
কী চলতে কী চলা হয়ে যায়
কেমন করে ভালোবাসলে কাছে আসা যায়
আমি কিচ্ছুটি জানি না
আমাকে ক্ষমা করুন জাহাঁপনা
বড় দুঃখী জীবন আমার
আঘাত আসুক—
নির্মম বেদনারা পায়ে হেঁটে
আমার খুব কাছাকাছি জড়ো হয়ে বসে থাকে
তুমি এভাবে চলে যাও বলে
দূরের দুপুরগুলো নীরবতা ভেঙে নেমে আসে
পাহাড়ের গড়ানে।

*

অনেক কথাই তোমাকে বলিনি
রাত্রির নীরব বাঙ্কার ঘিরে অজস্র মৃত্যু
জীবনের ছায়াময় অন্ধকারে প’ড়ে থাকে এক নিঃসঙ্গতা
মুখোমুখি কথা হয় আমাদের
জানলার পাশেই নিশ্চুপ পেয়ারাগাছ
তার পাশে আরও আছে দেয়ালে দেয়াল
কমলালেবুর ঘ্রাণ
আরও অনেক কথাই হয়তো তোমাকে বলা হবে না—
কোনোদিন ভেতরের কণ্ঠস্বর ফেঁপে বেরিয়ে আসে সকল ক্লান্তি
উপমাদের কৈশোরজুড়ে শুধুই অতীত
ব্যাঙছাতা রাত্রিযাপন
কী-যে দিন এল আমার—
একা, একা এবং একাকী কান্নার শব্দ।

পুরোটা পড়ুন