শরতের এইসব দিনের কাছে
গদ্য | ৫ ডিসেম্বর ২০২২
বহুদিন আগের মতো আজ এই নরোম শরতের দিনে ফিরে আসি সেইসব স্মৃতির কাছে যেখানে আজ ছ’বছরের অধিক সময়ের পর’ও অজস্র কাশফুল ফুটে আছে। যেখানে শুরু হয়েছিল আমার ভাবনার দোলাচল। নদীর পানিতে শেষ বিকেলের আলো-ছায়া আর হিহি হাওয়ার তোড়ে উড়ে আসা গাঙচিলের অজস্র পালক।
সারাদিন কনস্ট্রাকশানের কাজ, পাইলিং মেশিনের শব্দ, হাতুড়ি পেটার ঘটঘট আওয়াজের ভেতর এতসব অস্থিরতা জড়িয়ে থাকে তা কোনোদিন জানা হতো না। যদিও এমনই কোনো কানাগলির ভেতর থেকে ধীরে ধীরে চিন্তার পরিধি ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে এসেছিল আমার। প্রতিদিন বিকেলে নদীপারে আটকে যাওয়া কচুরিপানার সাথে আমার কথা হয়—কত দূরের নদীপথ পেরিয়ে এলো ওরা, এই এখানে এভাবে আবদ্ধ হয়ে যাবে তারা কোনোদিন ভাবেনি। অথচ জীবনের তাৎপর্য তো এমনই—কোথায় কোন লগনে থেমে যাবে তা কেউ জানে না।
শরতের কাশফুল, যার অপর নাম সাচ্চারুম স্পনটানিউম, বহদূরের রোমানিয়া থেকে এসেছিল যে। শরতের গগনশিরীষের ছায়া আমার ভালো লাগে। মাদাগাস্কা থেকে যে গাছ এদেশে এসেছিল দেড়শো বছর আগে, যার অপর নাম। আলবিজিয়া রিচার্ডিয়ানা। পৃথিবীতে যা আছে সবকিছুই রূপান্তরিত! সবকিছুই কি দ্বিতল রূপে অন্যকোথাও বাস করে! তাহলে আমার মতোই কেউ না কেউ পৃথিবীর অন্যকোনো দেশে বাস করে। হতে পারে এই কাশফুলের শুভ্রতার ভেতর আমি অন্যভাবে বেঁচে আছি। রোমানিয়া থেকেই যেন কাশফুলের সৌরভে ফুটে আছে আমার প্রাণ।
২.
নদীর চেয়ে সুন্দর তার মোহনা যেমন শৈশবের স্মৃতি বলতে নদীপারের সেইসব উপকথা যা শুনেছিলাম মুরুব্বিদের উঠোন-আড্ডায় যখন সন্ধ্যার পর শরতের ঝিরিঝিরি হাওয়ায় আমাদের বাড়ির উঠোনজুড়ে অদ্ভুত এক আলোছায়ার বিভ্রম তৈরি হতো আর আমরা মায়ের পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম যেন মায়ের কোলই আমাদের একমাত্র সম্বল বা মা ছাড়া কখনোই আমরা জানতাম না চাঁদের দেশের বটগাছে একজন বুড়ি বাস করে যার কোনো সন্তান নেই।
এই এতকাল পর আমার মনে হল নদীপারের মানুষের সাথে আমার যে দীর্ঘ সময়ের সখ্যতা তা লিখে রাখা প্রয়োজন। আমার এভাবে চোখের সামনে নদী ভাঙনের স্মৃতি। বন্যার পানিতে রাহেলা খালার ভেসে যাওয়া লাল শাড়ির কথা, আমাদের গ্রামে পারাপারের একমাত্র নদীপথ।
৩.
কিভাবে যেন শরতের নরম আবহ একটু একটু শীত ডেকে আনে। ইংরেজিতে ‘অটাম’ হলেও আমেরিকায় বলা হয় ‘ফল’। মানে শরতকাল। এইসব বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে কেবল সেই নদীতীরের কাছেই গিয়ে বসে পড়ি যার ওপারে কাশফুলের শুভ্রতা, সূর্যের আলোয় লাল হলুদ রঙে একটা রংধনুর দৃশ্য ফুটে থাকে সারাটা শরত, ভাদ্র আশ্বিনের সবকটি বিকেল।
ছ’বছর যাবৎ নদীতীরের পাশে একটা চাকরির সুবাদে থাকা হচ্ছে। এইসব সন্ধ্যার পর কেমন যেন পুরো নদীর রূপ পাল্টে যায়। শান্ত স্রোত, বড়ো বড়ো জাহাজ, ডিঙ্গি নৌকো, কোনো কোনোদিন আমার মন খারাপ। ক’দিন হল নদী দখল রুখতে সুদীর্ঘ চৌষট্টি কিলোমিটার ওয়াকওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, গাবতলী থেকে বসিলা পর্যন্ত হয়ে কাজ আবার বন্ধ হয়ে গেল। তবু এটুকু ওয়াকওয়ে ধরে হেঁটে হেঁটে যেতে যেতে কি দারুণ ভালো লাগে! বিকেল হলে বহু মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসে, শরতকালে ওপারের কাশফুলগুলো আপন মানুষের মতো কাছে ডাকে।
৪.
মাঝনদী থেকে আজ এক অলৌকিক শহর দেখতে পেলাম আমরা। সন্ধ্যার পরপর কবি পিয়াস মজিদের সাথে গ্রীণসিটির ঘাট থেকে মুলামুলি করে আধঘন্টার জন্য একশো বিশ টাকায় নৌকা ভাড়া করলাম। মাঝনদীতে গিয়ে দূর শহরের আলোর ছটা যখন নদীর পানিতে জ্বলজ্বল করছিল আর বৈঠা বাওয়ার শব্দ কানে বাজছিল—তখন মনে হয়েছিল তুমুল কোলাহলের মাঝেও এমন এক নৈঃশব্দ্য আছে যা অনুভূতিপ্রবণ মানুষের ভাবনার বিস্তৃতি ঘটায়। সিলিকন সিটির পার ঘেঁষে ঢাকা উদ্যানের দিকে যাচ্ছি আমরা—কাঁচা ঘাসের মায়াবি ঘ্রাণ শুঁকে পিয়াস ভাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে বলে, এই ঘ্রাণ বহুদিন পর খুঁজে পেলাম, মনে হয় হারিয়ে ফেলা স্মৃতির দিন ফিরে এল। আর আমার মন প’ড়ে থাকে দূর শহরের আলোকিত দৃশ্যের ভেতর।
আমাদের আধঘন্টা নৈশভ্রমণ শেষে ‘কাবাব-ই আড্ডা’য় এসে খেলাম চিকেন চাপ আর লুচি। তারপর আমার ছোট্টো খানকায় নিয়ে গেলাম কবি-কে। আমার খানকা, আমার নিবাস, বহু কবিদের আড্ডাস্থলে পরিণত হচ্ছে। এই-ই তো চেয়েছিলাম—চারপাশে অসংখ্য বই, অসংখ্য ইনডোরপ্লান্ট আর শোবার জন্য একটা খাট, আর একটা জানলা। যা চেয়েছিলাম সেই ছোটোবেলায়, মনেমনে এমন একটা রুমজুড়ে ঘুরেবেড়াতাম, তা এই তারুণ্যে এসে পূর্ণতা পেয়েছে। সেজন্যই বলি, কোনো স্বপ্নই অপূর্ণ থাকে না। শুধু অপেক্ষা এবং ধৈর্য্য ধরলেই তা পাওয়া যায়। যেমন আমি পেয়েছি অনেককিছু, হয়তো অনেক অনাগত সম্ভাবনার দিন।
হুটহাট করেই যা হবার হয়। পরিকল্পনা করে তেমনকিছুই হয় না। আজ হঠাৎ যেমন কবির আগমন, তেমনি আমিও যা ইচ্ছে হয়, তা করে ফেলি। অতশত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা রীতিনীতির সঙ্গে আপোষ করার সময় নেই। আপোষহীন জীবনের কাছেই ছুটে যাচ্ছি আমরা। পিয়াস ভাই দারুণ এক সন্ধ্যা উপঢৌকন দিলেন আমাকে—আমি দিলাম কোঁচড়ভর্তি তামান্না আর অজস্র মুগ্ধতা।
৫.
যেকোনো পর্যটন কেন্দ্র মূলত গড়ে ওঠে নদী, সমুদ্র বা পাহাড়ের উপত্যকায়। তাই আমার এখানেও তরতরিয়ে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো কফিশপ, রেস্টুরেন্ট। সপ্তাহে তিন চারদিন ডি-জুসের ফালুদা না খেলে কেমন যেন হা-পিত্যেশ লাগে। আশিক ভাই এবং দিশা আপুর হাসিমুখ, খাবারের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। সব মিলিয়ে যেকাউ-কে মুগ্ধ করবে ডি-জুসের আতিথেয়তা। আরও আছে রিভেরিয়া, যেখান থেকে নদীর ছোটো ছোটো ঢেউ চোখে পড়ে। আমার এই প্রতিদিনকার গড়িমসি জীবনের স্থিরতা প্রয়োজন—আর ভালো লাগে না নিঃসঙ্গ যাপন।
বাড়ি যাওয়ার সারাটা পথ শরতের সুন্দর আবহ জড়িয়ে ধরে আমাকে। রোদের তীব্রতা নেই, ততোটা মেঘলা’ও নয়। সমস্ত ঋতু-কে পেছনে ফেলে আমার কেবল শরত হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
নদীর উপর নীলাকাশ, শেষ রাত্রির পাঁজর খুলে আমাদের কাশবনে ডেকে ওঠে অচিন দেশের পাখি। কচুরিপানার ঝোপে বাসা বাঁধে জলচর ডাহুক। আমাদের গ্রামের পাশে নদীর যে মোহনা বয়ে গেছে, তার নাম বুড়িগঙ্গা। সেই কতকাল আগে আমরা জেনেছিলাম একাত্তরের যুদ্ধে এই নদীতে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছিল, অসংখ্য মানুষের লাশ ভেসে যাচ্ছিল অজানা উদ্দেশে। আবার একই কাশফুল তখনও ফুটেছিল, এই তেপান্তরে কোল ঘেঁষে কত স্মৃতির রাত ফুরিয়ে গেল।
৬.
নদী যেমন শান্ত স্নিগ্ধ—পারের কাশবনে আরও ভিন্নতরো আবেদন প্রকাশ পায়, তেমনিভাবে কত মানুষ-কে টেনে নিয়ে গেল। বস্তবন্দি গলাপঁচা লাশ ভেসে ওঠে, সাতার না জানা মানুষকে টেনে নিয়ে যায় গভীর তলদেশে। সমস্ত বস্তুরই দু’টো রূপের কথা বলেছিলাম সেজন্য।
ও নদী—তুমি কি সমুদ্রের সহোদরা না কাশফুলের প্রেমে পড়া নবীন জলাশয়!
আরও পড়ুন
দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া
গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪যেকোনো প্রস্থানই অনন্ত বেদনার ছায়া ফেলে চলে যায়। কলকাতা বইমেলার পর্দা নেমে গেল আজ, কী অবাক শীত-শীত আচ্ছন্নতা চারদিকে—কতজন, কত মানুষের সঙ্গে বন্ধুতা হলো। কী হবে? এই হতচ্ছাড়া ছোট্ট পাথরটাকে কতজনই তো ছেড়ে গেছে। একাকি নিছানো অন্ধকারে মুখ থুবড়ে কতদিন কেঁদেছে সে। খুব ক্লিশে যন্ত্রণা। তবু এই চেনা-চেনা মানুষগুলো আমার হৃদয়ে একটা মীনরঙ্গ পাখি হয়ে বহুদিন বেঁচে থাকবে।
মানুষের কাছাকাছি না গেলে কখনোই মানুষকে আবিষ্কার করা যায় না। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলি—অনেককিছু শেখা যায়, কৌতূহলী না হলে কখনোই ভিন্নতর সৃষ্টির গতিপথ তৈরি হয় না। আমি কলকাতার প্রায় দু’মাস যাপনের দিনগুলোতে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখেছি, কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো দীঘির পাড়ে পাতানো বেঞ্চে বসে, প্রায় দেখেছি একটা অন্ধ লোকের সঙ্গী একটা নিরীহ কুকুর, যে তাকে পথ দেখায়, বন্ধুর মতোই আগলে রাখে।
We live in a wonderful world that is full of beauty, charm and adventure. There is no end to the adventures we can have if only we seek them with our eyes open.
–Jawaharlal Nehru
আমি এক নতুন পৃথিবী-কে দেখতে চেয়েছি। চোখ-কান খুলে তাকানো নয়, মনের দুয়ার খুলে, শিরধার উঁচু করে তাকাতে চেয়েছি চারপাশে—পাহাড়, সমুদ্র বা আকাশের পাটাতন থেকে খুবলে নিতে চেয়েছি মনের সমস্ত অশুভ দর্পণ।
কী হলো—রাস্তাপারাপারের সময় কার আঙুলের সাথে যেন আমার আঙুল ছুঁয়ে গেল—তার চোখের দিকে চোখ পড়তেই কী অদ্ভুত মায়া খসে পড়ল করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে। আমি সেই দু'খানা আবেগ নিয়ে ফিরে এলাম।
দীপ শেখর চক্রবর্তী, আমার প্রিয় দীপ’দা। মুন্নী সেন, শুভদীপ নায়ক আর শিপ্রা মালাকার, শেষ সময়ের সান্নিধ্য আমাকে এত আনন্দ দিয়েছে আজ। ফেরার পথে শুধু মনে পড়েছে খানিক আগেই তো কিছু একটা ছিল, এখন একেবারেই সুনসান নীরবতা।
তবু যদি—আবারও দেখা হয়ে যায়, কোনোকোনো খেয়ারি সন্ধ্যায়। জীবনের জলপ্রপাত কেবলই নিজেকে জানার। সবকিছু অতিক্রম করে নিজেকে ভালোবাসো, নিজেকে জানো প্রিয়তম বন্ধু, কোনো ভয় নেই, কোনো সঙ্কোচ নেই।
২.
কী হলো—পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে না তোমার হস্তরেখায় কে যেন বলেছিল একটা শিশুজন্মের মতো অকথ্য বেদনাবহ সময় তোমারও আসবে। ঠিক তা নয়, হয়তো আমিই আমাকে বলেছিলাম ঘোর স্বপ্নে, এক অজানা বিন্দুবৃত্তের ভেতর। জরাজীর্ণ, লক্ষ্যচ্যুত, অনুতাপ, বেদনা, ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতা, বিমর্ষ, কলহ, জঞ্জাল আর এত এত হইহুল্লোড় কখনোই আমি চাইনি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কি অপলক দৃষ্টি—আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি, ঠিক ভেতর-বাইরের অবক্ষিপ্ত নীরবতা যেন। কতদিন নিজের সঙ্গে কথা হয় না। তুমিও দেখো, নিজেকে, ভাবো—কেমন আছো? এদিকটায় খুব শৈত্যপ্রবাহ আজ, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, আয়নার নির্জনতার চেয়ে আর কোনো বিভোর শ্রোতা নেই।
৩.
বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে এলেও মন প’ড়ে থাকে মোহাম্মদপুরের গলি-ঘুপচিতে। ঢাকার তল্লাটে পাথরখচিত রাত ঘিরে চিররহস্যের ঘূর্ণনে সন্ধ্যার উপচে পড়া ভিড় ঠেলে যেন আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক আসাদগেট মোড়ে। কিন্তু না, আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে। শান্তিপার্কের ছোট্ট বাসাটা গত দেড়মাস ধরে আমার আশ্রয়, সারাদিন কিছু না হলে লেপটেসেপটে শুয়ে থাকি, জানলার পাশে বসে বই পড়ি, ছোট্ট জানালা খুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি, কী বিস্ময় লাগে! কী অদ্ভুত এ আকাশ!
কলকাতায় আসার পরদিন থেকে দুর্দান্ত কিছু বই সংগ্রহ করেছি। কলেজস্ট্রিট গেলে খালি হাতে আর ফেরা হয় না। সেই পুরোনো অভ্যেস মস্তিষ্কে ঠেসে গেছে। সেদিন কলকাতা বইমেলায় দীপ’দা, মানে প্রিয় দীপ শেখর চক্রবর্তী’র সঙ্গে এতটা দারুণ সময় কাটিয়েছি। গত দেড় মাসের সবচেয়ে ভালো দিন ছিল আমার জন্যে। তারপর থেকে আজও অব্দি রুম থেকে বেরোয়নি আর, বাইরের এইসব হট্টগোল আমার ভালো লাগে না। যদিও আমাদের কলোনিতে কি যেন অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য আছে—মানুষের নরম ভাষা, হলুদ আলোর করতালি আর একাকি বিষণ্ণ মানুষের নির্জীব কান্না।
দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া! বলো।
শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা
গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪শতাব্দীর স্মৃতিচিহ্ন কখনো এরকম এক ঘোরলাগা সময়ের সাথে ছায়াচ্ছন্ন সবুজ অথচ বিবর্ণ দেয়ালঘেঁষা কলকাতার মুখর গলিগুলো আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছে। সেই কবে এসেছি, এখনো বেরোয়নি সেভাবে। লিটলম্যাগাজিন মেলায় খুব গোছানো আয়োজন দেখে মন ভালো তো হলো কিন্তু লিটলম্যাগ নিয়ে আমাদের বাংলা একাডেমির কঞ্জুসপনা আমাকে প্রতিবারই হতাশ করে।
ব্যক্তিগত স্বর, সংস্কৃতি, কবিতা আর ফেনিল বৈঠক সেরে কতিপয় কবিবন্ধুদের সঙ্গে আজকের মতো আলোচনা শেষ হলো। দেবারতি মিত্রের প্রয়াণ খুব গভীরভাবেই আমাকে আহত করেছে। কিছুদিন আগেই তার লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল।
২.
শান্তিপার্কের চারতলার ছোট্ট একটা রুমে আমি, আমার মামাতো ভাই গাদাগাদি করে আছি প্রায় মাসখানেক হলো। কয়েকদিন পেরিয়ে যায় আবদ্ধ রুমে, আমাদের রুমের ছোট্ট জানালা থেকেই আকাশের অবাক করা খণ্ডাংশ চোখে পড়ে, পাশের বিল্ডিংয়ের বেলকনি, ছাদে টানানো রশিতে ঝুলে থাকা নানান রঙের পোশাক, ছাদের কার্নিশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বৃক্ষচারার টব, তাহলে আমি বাইরে বেরিয়ে কোথায় যাব যদি জানালা খোললেই এত মুগ্ধতা ঘনিয়ে আসে।
৩.
একদল অসুস্থ শুয়োর ছড়িয়ে আছে আমার চারপাশে। যারা আমার পথ আটকাতে চায়—ওদের জুতোটপেটা করে বিতাড়িত করলাম আজ। ‘ক্ষতিকারক সবকিছুই বিতাড়িত করতে হবে জীবন থেকে’ এক বিদগ্ধ মনীষী একদা বলেছিল আমাকে।
৪.
এ কোন অশালীন শীত নেমে এলো সারা কলকাতায়—আমার হাত-পা জমে যাচ্ছে। হলুদ আলোয় একপাল অনুগামী তরুণদল তাদের বৃত্তের ভেতর হাঁটছে। অথচ আমার শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা।
ট্রেনের কামরায় হুবহু’র পথচলা
গদ্য | ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩অনেকেই হয়তো হুবহু সম্বন্ধে জানতে চায়—অনেক প্রশ্নও জমা হতে পারে, মনে হতে পারে এ আবার কেমন নাম! হুবহু! কিন্তু হুবহু প্রথম সংখ্যা ছেপে আসার পর গড়গড় করে হাজারখানেক কপি ফুরিয়ে গেল কয়েকদিনেই! সম্পাদক হয়ে আমার নিজেরই চক্ষু চড়কগাছ! কেননা, আমি পূর্বে ‘বেয়ারিং’সহ বেশ কয়েকটা লিটলম্যাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। বেয়ারিং আমাকে যেটুকু পরিচিত করেছে, যেটুকু সমাদৃত করেছে, হুবহু’র হয়তো সেই সময় এখনো আসেনি। কিন্তু হুবহু শুরু থেকেই আমাকে বেশ পরিতৃপ্ত করেছে। বেয়ারিং নিয়ে এখন আর তেমন ভাবনা নেই। আপাতত চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। আগামীকালের ভাবনা সম্পর্কে বলতে পারছি না।
তো, আমি যখন কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী তরুণের সঙ্গে কমলাপুর থেকে চিটাগং মেইলে চড়ে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। তখন হঠাৎ করেই বহুদিনের জমে থাকা একটা পরিকল্পনা তাদের জানালাম। তারা সবাই আমাকে সাহস দিল, তারা বলল অন্তত তাদের জন্য হলেও যেন কাজটা শুরু করি।
হুবহু প্রকাশ হবার পর থেকে এত এত মানুষ আমাদের প্রশংসা করেছে—শুধু দিনলিপি নিয়ে পূর্বে কোনো কাজ হয়নি, ওপার বাংলার মানুষেরাও আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছে এর জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততার ফলে হুবহু-কে নিয়মিত সময় দিতে পারছি না বলে আমারও যে দুঃখ হয়।
হুবহু’র শুরু থেকে আজ অব্দি আমার সঙ্গী ছিল এফাজ মোবারক এবং তাশরিফ মাহমুদ। ওদের মতো চঞ্চল তারুণ্য পেয়ে আমি আনন্দিত। সর্বোপরি সবার জন্যই অনেক অনেক ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।
*লেখাটা কেমন যেন ছাড়াছাড়া। শুধু লিখতে হবে তাই লিখলাম, নয়তো আরও পরিমার্জনা করা যেত। ধন্যবাদ।