আতিক ফারুক

লেখক

গদ্যের শরীর বেয়ে অদ্ভুত নোনাজল

গদ্যের শরীর বেয়ে অদ্ভুত নোনাজল

গদ্য | ৩১ আগস্ট ২০২৩

সারাদিন থমথমে হাওয়া। জানলা হতে ভেসে আসে আশা ভোঁশলে ‘কিসি মেহেরবা’নে আঁ’কে মেরি জিন্দেগি সাজাদি’। ঘুমের ভেতর স্বপ্নের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে একটা জীবন।

আজ খুব স্মৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা একটা সর্পিল প্রেমোপাখ্যান তোমাকে বলতে চাই। তার নাম ছিল আ আর আমার নাম ছিল স।

ধরো তুমিই সেই আ আর আমিই সেই স। আমাদের প্রেম ছিল না, আমাদের বন্ধুত্ব ছিল না। আমাদের আদতে কিছুই ছিল না একরকম মোহ ছাড়া, সেই মোহ ভেঙে গেল অনেকদিন আগে। আজ এতবছর পর তোমার দিকে তাকিয়ে খুব স্মৃতি জড়িয়ে ধরল আমাকে।

*

ধূপের আবছায়া অন্ধকারের যে মলিনতা—কাগজের স্বরূপে আবির্ভূত হতে থাকে যে বেদনার নীল কাব্য, শিরশিরে হাওয়ার মতো মন খারাপ করা রাত্রির যে আকুল আবেদন—তার পাশেই থেমে থাকে একটা ভেজা জীবন। তবু আমি সন্ধ্যার পর নিজের মতো করে বেঁচে থাকি, ছোট্টো খুপরির ভেতর বই আর গ্রাফিতির শরীর ছুঁয়ে বসে পড়ি অজস্র অক্ষরের বারান্দায়। বইয়ের পাতায় পাতায় যে নরম শব্দ আর বাক্যের কুশলতা—ভাবনার দরোজা ঠেলে সমস্ত শঠতা উড়ে যায়।

*

সরীসৃপের মতো এমন খামোখা দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, অপেক্ষা আর অপেক্ষা—সত্যের পেট চিপে কে যেন বলে, জীবন-কে তুমি যতটা সহজভাবে দেখো, তা আসলে ততটা সহজতর নয়। জীবনের স্বাধীনতা যেখানে ফুরিয়ে যায়, সেখানে জীবন আরও ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

*

আমার এই সমস্ত অসাড় সময়গুলো কোথাকার কোন পাদদেশে চুপ করে বসে আছে নিরঞ্জন হাওয়ার দোল খেয়ে, জানি না—খুব বীভৎস এবং দুর্গম পথ ধরে এগিয়ে চলেছি, তোমাকে কীভাবে বলি এই না পাওয়া জীবনের পাশে এসে বসে থাকো যেন। কিছুই বলতে পারি না, আমি কবিতার ভাষা, শব্দ এবং স্বর কোথায় যেন মনের ভুলে ফেলে এসেছি। মনের অসুখটা বড়ো জ্বালাতন করছে। না আছে মনের সাহস, না শরীরের সক্ষমতা—সবকিছুই মরে আসছে, দুপুরটাও এত উদাসী হাওয়ায় ভেসে ভেসে কোথায় যেন ছুটে চলেছে—থির, আরও থির-থির কোমল শুক্রবারের অবসন্নতা আজ।

*

জীবনের এই আকাল সময়ের সমস্ত পদরেখা ভুলে গিয়ে মায়ের স্মৃতিগুলোর পাশে চুপচাপ বসে থাকি, আরও বিষণ্ণ লাগে, আরও অজস্র শূন্যতা নেমে আসে। পাড়াজুড়ে, উঠোনের কোণে গজিয়ে ওঠা লাউশাকের চারাটাও জেনে যায়—মায়ের আদরের চেয়ে পৃথিবীতে আর কোনো এমন আদর নেই, যে চলে গেলে চারপাশ স্তব্ধ মরুভূমি হয়ে ওঠে—তা আজ খুব উপলব্ধি হচ্ছে। ফিরেছি, ফিরে দেখি আমাদের মাথার উপর থেকে সমস্ত ছায়া বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেটুকু রেখে গিয়েছি, তার খোসাটুকুও নেই কোথাও। আমি আর কতদিন মাতৃহীন পৃথিবীতে এভাবেই বেঁচে থাকব!

*

যেখানে আমাদের ছোটোবেলা ফুরিয়ে গেছে— সেখান থেকেই মূলত শুরু হয়েছে ঘুণে ধরা বিবস্ত্র জীবন। ঘনায়মান জীবনের শেষ বলতে কিছু নেই, শুরু থেকেই এ এক উগ্র অন্ধকার। আমি হতাশা আর হাহাকারের মধ্যবর্তী সময়ের পাটাতনে বসে আছি, ভাবছি—জীবনের এ কেমন প্রলয়! মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা বিপুল উন্মাদনা।

*

কার জন্য চেয়ে থাকব পথ—যতদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুণে দেখেছি, ততদিনই শূন্য মনে ফিরেছি আমি—সেইসব হৃদয়ের অলিন্দে ঝুলে থাকা অনুনাদ, পরাধীন ভূখণ্ডে জটিল ধাঁধার মতো উত্তর, জীবন কী জটিল ক্যালকুলাস। এমন কথা কখনো বলতে হয় না—হয়তো আঁকড়ে ধরো, নয়তো দূরের আত্মীয়ের ছায়াঢাকা বাড়িতে আত্মগোপন করো—তবু আমাকে ক্লান্ত করো না, আমার পাশে একটু নীরবে বসে থাকো।

*

বড়ো অসাড় এ সময়—জানলা হতে খুব গম্ভীর একটা আকাশ দেখা যায়। আমি তোমার ভাবনার বারান্দায় ঘষটাতে ঘষটাতে একটা অবক্ষয় মূর্তি দাঁড় করিয়েছি। কিছুই করার নেই আর—জীবনের পথ যদি এমনই হয়, দুরাশার মেঘে ঢাকা বিকেল।

*

বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই আর। কথার পিঠে জমে থাকা কত কথা, স্বপ্নিল উদ্ভাস। অনাবৃত বুকের কাছে কাঁচা ঘাসের মতো গন্ধ, চারপাশে সবুজের অরণ্যে ছেয়ে গেছে। মৃতদের কোনো উল্লাস নেই, বেদনা নেই। বেঁচে থাকা মানুষের যত গান—গ্রীবা ও থুতনির নিকটবর্তী ভর্ৎসনা শুধু।

*

জীবনের পাটাতনে বসে আছি আমরা—একটি উদ্ভ্রান্ত নগ্ন কৈশোরের প্রান্তে চোখ ফিরে তাকিয়ে আছি, অসীম সম্ভাবনার পথ ফেলে আমরা কবে যে হারিয়ে যাই নিজেদের দূরাগত দৃষ্টিসীমায়। তাই ঘটে যায়, যা আমরা সূক্ষ্মদর্শী চেতনায় ভাবতে পারি না কখনো। জীবনের পাঠ তো এমন—তুমি হতে চাও দূরের আকাশ, তোমাকে হতে হয় নখদর্পণের প্রতিবিম্বিত হাওয়া।

*

প্রেম ও লালসার সন্ধাকালীন চিৎকারে তবু আমার উদাস মনে জেগে থাকে মিথ্যে অনুরাগ। যারা প্রেম নেই বলে জীবনের অনেক সময় শ্রান্তিতে কাটিয়ে দেয়—যাদের ভাবনা উড়ে যায় দূরের গ্রামের দিকে; তারা কোনোদিন সভ্যতার আঁচল খুলে দু-আনা পয়সার বিপরীতে ব্যক্তিগত কোনো বুনিয়াদ দাঁড় করাতে পারে না। তারা শুধু একা একা ভাল্লাগে না বলে বলে পালিয়ে বেড়াতে চায়। কিন্তু, তথাগত উৎকণ্ঠা যখন জনৈক প্রেমিকার কথা মনে করিয়ে দেয়, তখন আমার আসলেই ভাল্লাগে না—আমি তখন কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম মেইলে চড়ে চলে যেতে চাই সুপ্ত ও সুনসান নীরব মেঘের কাছে।

*

আর এ সমস্ত অর্বাচীন রৌদ্ররেখা ভুলে গিয়ে আমি তোমাকে ঘিরে তৈরি করব পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন দেয়াল—সেখানে তুমি তুমি, তোমাদের দীর্ঘ অবকাশ, পথের ক্লান্তি পথেই ফেলে আসো, জীবন-কে উপভোগ করো মুহূর্তের ব্যঞ্জনায়—আমার এসব ভাবনার বেলকনিতে কখন যে রোদের পরত এসে আছড়ে পড়ে, বলতে পারি না—মন কেমন করা অবসাদ চারপাশে।

*

বড়ো অসাড় এ সময়—জানলা হতে খুব গম্ভীর একটা আকাশ দেখা যায়। আমি তোমার ভাবনার বারান্দায় ঘষটাতে ঘষটাতে একটা অবক্ষয় মূর্তি দাঁড় করিয়েছি। কিছুই করার নেই আর—জীবনের পথ যদি এমনই হয়, দুরাশার মেঘে ঢাকা বিকেল।

*

তোমরা ভুলে যেয়ো না কীভাবে মন খারাপের বিকেল অতিবাহিত হয়—কীভাবে পৃথিবীর আদিমতম মানুষের স্বৈরাচারী মনোভাব উতরে যায় ধূপকাঠি সন্ধ্যায়—সে এক কঠিন প্রস্তরীভূত যুগের কথা, যখন মানুষ ভালোবাসার কথা লিখে রাখত পাতাদের শরীরে। সেদিন কি এসেছিল কখনো—আমাদের ঝুমকোজবা সময়ের অদ্বৈত আবহ!

*

মৃত্যু এত কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে—চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় একটা নির্জন দুপুরের হাওয়া এসে আলগোছে জড়িয়ে ধরেছে আমাকে। কী নীল নিসর্গের উপত্যকা! যেন দরোজায় কড়া নাড়ে, যেন বেঁচে থাকা মুহূর্ত-কে প্রতিনিয়ত আলিঙ্গন করে মৃত্যু দূত—তার পিছু পিছু আমি চলে যাই মুমূর্ষু হৃদয়ের করিডোরে। একা একা ভাবি, আর কত অবসন্ন দিন পেরিয়ে গেলে আমাদের বেঁচে থাকা দিন, আমাদের অনাদরে ফোটে ওঠা কামনার কোরক উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে রোমশ শরীরে।

*

সন্ধ্যা আমাকে একা ফেলে ডুবে যাচ্ছে গভীর আলোকহীন মর্মমূল বেদনায়। আমি অস্থির হয়ে উঠছি ধীরে ধীরে—আমার যাপনের দিনগুলো বড়ো অসহায়, ঠিকঠাক বিলাপও করতে জানে না। কোথাকার হাওয়া এসে কোথায় গড়িয়ে পড়ে, জানি না—ভাবনাদের এত উঁকিঝুঁকি আমার হৃদয়ে! মনে হয় সবকিছু দুমড়েমুচড়ে চলে যাই।

আরও পড়ুন

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া

গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

যেকোনো প্রস্থানই অনন্ত বেদনার ছায়া ফেলে চলে যায়। কলকাতা বইমেলার পর্দা নেমে গেল আজ, কী অবাক শীত-শীত আচ্ছন্নতা চারদিকে—কতজন, কত মানুষের সঙ্গে বন্ধুতা হলো। কী হবে? এই হতচ্ছাড়া ছোট্ট পাথরটাকে কতজনই তো ছেড়ে গেছে। একাকি নিছানো অন্ধকারে মুখ থুবড়ে কতদিন কেঁদেছে সে। খুব ক্লিশে যন্ত্রণা। তবু এই চেনা-চেনা মানুষগুলো আমার হৃদয়ে একটা মীনরঙ্গ পাখি হয়ে বহুদিন বেঁচে থাকবে।

মানুষের কাছাকাছি না গেলে কখনোই মানুষকে আবিষ্কার করা যায় না। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলি—অনেককিছু শেখা যায়, কৌতূহলী না হলে কখনোই ভিন্নতর সৃষ্টির গতিপথ তৈরি হয় না। আমি কলকাতার প্রায় দু’মাস যাপনের দিনগুলোতে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখেছি, কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো দীঘির পাড়ে পাতানো বেঞ্চে বসে, প্রায় দেখেছি একটা অন্ধ লোকের সঙ্গী একটা নিরীহ কুকুর, যে তাকে পথ দেখায়, বন্ধুর মতোই আগলে রাখে।

We live in a wonderful world that is full of beauty, charm and adventure. There is no end to the adventures we can have if only we seek them with our eyes open.

–Jawaharlal Nehru

আমি এক নতুন পৃথিবী-কে দেখতে চেয়েছি। চোখ-কান খুলে তাকানো নয়, মনের দুয়ার খুলে, শিরধার উঁচু করে তাকাতে চেয়েছি চারপাশে—পাহাড়, সমুদ্র বা আকাশের পাটাতন থেকে খুবলে নিতে চেয়েছি মনের সমস্ত অশুভ দর্পণ।

কী হলো—রাস্তাপারাপারের সময় কার আঙুলের সাথে যেন আমার আঙুল ছুঁয়ে গেল—তার চোখের দিকে চোখ পড়তেই কী অদ্ভুত মায়া খসে পড়ল করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে। আমি সেই দু'খানা আবেগ নিয়ে ফিরে এলাম।

দীপ শেখর চক্রবর্তী, আমার প্রিয় দীপ’দা। মুন্নী সেন, শুভদীপ নায়ক আর শিপ্রা মালাকার, শেষ সময়ের সান্নিধ্য আমাকে এত আনন্দ দিয়েছে আজ। ফেরার পথে শুধু মনে পড়েছে খানিক আগেই তো কিছু একটা ছিল, এখন একেবারেই সুনসান নীরবতা।

তবু যদি—আবারও দেখা হয়ে যায়, কোনোকোনো খেয়ারি সন্ধ্যায়। জীবনের জলপ্রপাত কেবলই নিজেকে জানার। সবকিছু অতিক্রম করে নিজেকে ভালোবাসো, নিজেকে জানো প্রিয়তম বন্ধু, কোনো ভয় নেই, কোনো সঙ্কোচ নেই।

২.

কী হলো—পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে না তোমার হস্তরেখায় কে যেন বলেছিল একটা শিশুজন্মের মতো অকথ্য বেদনাবহ সময় তোমারও আসবে। ঠিক তা নয়, হয়তো আমিই আমাকে বলেছিলাম ঘোর স্বপ্নে, এক অজানা বিন্দুবৃত্তের ভেতর। জরাজীর্ণ, লক্ষ্যচ্যুত, অনুতাপ, বেদনা, ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতা, বিমর্ষ, কলহ, জঞ্জাল আর এত এত হইহুল্লোড় কখনোই আমি চাইনি।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কি অপলক দৃষ্টি—আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি, ঠিক ভেতর-বাইরের অবক্ষিপ্ত নীরবতা যেন। কতদিন নিজের সঙ্গে কথা হয় না। তুমিও দেখো, নিজেকে, ভাবো—কেমন আছো? এদিকটায় খুব শৈত্যপ্রবাহ আজ, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, আয়নার নির্জনতার চেয়ে আর কোনো বিভোর শ্রোতা নেই।

৩.

বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে এলেও মন প’ড়ে থাকে মোহাম্মদপুরের গলি-ঘুপচিতে। ঢাকার তল্লাটে পাথরখচিত রাত ঘিরে চিররহস্যের ঘূর্ণনে সন্ধ্যার উপচে পড়া ভিড় ঠেলে যেন আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক আসাদগেট মোড়ে। কিন্তু না, আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে। শান্তিপার্কের ছোট্ট বাসাটা গত দেড়মাস ধরে আমার আশ্রয়, সারাদিন কিছু না হলে লেপটেসেপটে শুয়ে থাকি, জানলার পাশে বসে বই পড়ি, ছোট্ট জানালা খুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি, কী বিস্ময় লাগে! কী অদ্ভুত এ আকাশ!

কলকাতায় আসার পরদিন থেকে দুর্দান্ত কিছু বই সংগ্রহ করেছি। কলেজস্ট্রিট গেলে খালি হাতে আর ফেরা হয় না। সেই পুরোনো অভ্যেস মস্তিষ্কে ঠেসে গেছে। সেদিন কলকাতা বইমেলায় দীপ’দা, মানে প্রিয় দীপ শেখর চক্রবর্তী’র সঙ্গে এতটা দারুণ সময় কাটিয়েছি। গত দেড় মাসের সবচেয়ে ভালো দিন ছিল আমার জন্যে। তারপর থেকে আজও অব্দি রুম থেকে বেরোয়নি আর, বাইরের এইসব হট্টগোল আমার ভালো লাগে না। যদিও আমাদের কলোনিতে কি যেন অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য আছে—মানুষের নরম ভাষা, হলুদ আলোর করতালি আর একাকি বিষণ্ণ মানুষের নির্জীব কান্না।

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া! বলো।

পুরোটা পড়ুন
শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা

শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা

গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শতাব্দীর স্মৃতিচিহ্ন কখনো এরকম এক ঘোরলাগা সময়ের সাথে ছায়াচ্ছন্ন সবুজ অথচ বিবর্ণ দেয়ালঘেঁষা কলকাতার মুখর গলিগুলো আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছে। সেই কবে এসেছি, এখনো বেরোয়নি সেভাবে। লিটলম্যাগাজিন মেলায় খুব গোছানো আয়োজন দেখে মন ভালো তো হলো কিন্তু লিটলম্যাগ নিয়ে আমাদের বাংলা একাডেমির কঞ্জুসপনা আমাকে প্রতিবারই হতাশ করে।

ব্যক্তিগত স্বর, সংস্কৃতি, কবিতা আর ফেনিল বৈঠক সেরে কতিপয় কবিবন্ধুদের সঙ্গে আজকের মতো আলোচনা শেষ হলো। দেবারতি মিত্রের প্রয়াণ খুব গভীরভাবেই আমাকে আহত করেছে। কিছুদিন আগেই তার লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল।

২.

শান্তিপার্কের চারতলার ছোট্ট একটা রুমে আমি, আমার মামাতো ভাই গাদাগাদি করে আছি প্রায় মাসখানেক হলো। কয়েকদিন পেরিয়ে যায় আবদ্ধ রুমে, আমাদের রুমের ছোট্ট জানালা থেকেই আকাশের অবাক করা খণ্ডাংশ চোখে পড়ে, পাশের বিল্ডিংয়ের বেলকনি, ছাদে টানানো রশিতে ঝুলে থাকা নানান রঙের পোশাক, ছাদের কার্নিশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বৃক্ষচারার টব, তাহলে আমি বাইরে বেরিয়ে কোথায় যাব যদি জানালা খোললেই এত মুগ্ধতা ঘনিয়ে আসে।

৩.

একদল অসুস্থ শুয়োর ছড়িয়ে আছে আমার চারপাশে। যারা আমার পথ আটকাতে চায়—ওদের জুতোটপেটা করে বিতাড়িত করলাম আজ। ‘ক্ষতিকারক সবকিছুই বিতাড়িত করতে হবে জীবন থেকে’ এক বিদগ্ধ মনীষী একদা বলেছিল আমাকে।

৪.

এ কোন অশালীন শীত নেমে এলো সারা কলকাতায়—আমার হাত-পা জমে যাচ্ছে। হলুদ আলোয় একপাল অনুগামী তরুণদল তাদের বৃত্তের ভেতর হাঁটছে। অথচ আমার শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা।

পুরোটা পড়ুন
ট্রেনের কামরায় হুবহু’র পথচলা

ট্রেনের কামরায় হুবহু’র পথচলা

গদ্য | ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অনেকেই হয়তো হুবহু সম্বন্ধে জানতে চায়—অনেক প্রশ্নও জমা হতে পারে, মনে হতে পারে এ আবার কেমন নাম! হুবহু! কিন্তু হুবহু প্রথম সংখ্যা ছেপে আসার পর গড়গড় করে হাজারখানেক কপি ফুরিয়ে গেল কয়েকদিনেই! সম্পাদক হয়ে আমার নিজেরই চক্ষু চড়কগাছ! কেননা, আমি পূর্বে ‘বেয়ারিং’সহ বেশ কয়েকটা লিটলম্যাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। বেয়ারিং আমাকে যেটুকু পরিচিত করেছে, যেটুকু সমাদৃত করেছে, হুবহু’র হয়তো সেই সময় এখনো আসেনি। কিন্তু হুবহু শুরু থেকেই আমাকে বেশ পরিতৃপ্ত করেছে। বেয়ারিং নিয়ে এখন আর তেমন ভাবনা নেই। আপাতত চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। আগামীকালের ভাবনা সম্পর্কে বলতে পারছি না।

তো, আমি যখন কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী তরুণের সঙ্গে কমলাপুর থেকে চিটাগং মেইলে চড়ে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। তখন হঠাৎ করেই বহুদিনের জমে থাকা একটা পরিকল্পনা তাদের জানালাম। তারা সবাই আমাকে সাহস দিল, তারা বলল অন্তত তাদের জন্য হলেও যেন কাজটা শুরু করি।

হুবহু প্রকাশ হবার পর থেকে এত এত মানুষ আমাদের প্রশংসা করেছে—শুধু দিনলিপি নিয়ে পূর্বে কোনো কাজ হয়নি, ওপার বাংলার মানুষেরাও আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছে এর জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততার ফলে হুবহু-কে নিয়মিত সময় দিতে পারছি না বলে আমারও যে দুঃখ হয়।

হুবহু’র শুরু থেকে আজ অব্দি আমার সঙ্গী ছিল এফাজ মোবারক এবং তাশরিফ মাহমুদ। ওদের মতো চঞ্চল তারুণ্য পেয়ে আমি আনন্দিত। সর্বোপরি সবার জন্যই অনেক অনেক ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।

*লেখাটা কেমন যেন ছাড়াছাড়া। শুধু লিখতে হবে তাই লিখলাম, নয়তো আরও পরিমার্জনা করা যেত। ধন্যবাদ।

পুরোটা পড়ুন