আতিক ফারুক

লেখক

আমাদের স্বপ্নগুলো উড়ে যায় জীবনের জরাজীর্ণ কলেবরে

আমাদের স্বপ্নগুলো উড়ে যায় জীবনের জরাজীর্ণ কলেবরে

গদ্য | ১ নভেম্বর ২০২২

এই রাতে—মনোগত বিলাপ শোনবার মতো কেউ কি জেগে আছ বন্ধু! অবলুপ্ত প্রণয়ের কথা আর কি বলব! একা একা জেগে আছি, কিছু দূরে ছায়াভ্রম জীবনের সরোদ। সেই অচেনা দিনের খোলস চিরে যেদিন আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাতের মেঘঢাকা আলো-আঁধারির শহরে। সেদিন থেকে নূতনতর ভাবনার সীমানায় আমরা বহুদিন ঘোরগ্রস্ত সময়ের গোলকধাঁধায় জমে থাকি। তারপর, আবারও—পৃথিবীর এমন দুঃসহ স্মৃতির হাতল খুলে ভুলে যাই পুরোনো দিন।

দেখো, রাতের কলুষ হতে বহুদূরের জলমগ্ন লোকালয়ে একটা সুন্দর সকাল নেমেছে। পুবের আকাশে খুব ধীরলয়ে, ডিমের কুসুমের মতো হলুদ-লাল সূর্য একটু একটু পা ফেলছে আর দীর্ঘতর আলোক- বিভ্রম তৈরী করছে, শুনতে কি পাও প্রাতভ্রমণে পাখিদের হুল্লোড়—আমার জাগরক্লান্ত চোখে তবু সকালের এমন হুহু হাওয়া বয়ে যায়। কি সুন্দর সকালের শুরু। যেন আবার—তোমার অভিমানের মতোই এক আশ্চর্য বিকেলের হাওয়া এখানে—আমি অবিরাম গেয়ে উঠি সন্ধ্যার উদ্গত বেদনার বুকে, আর না জানা হেয়ালি পাখিদের খসে পড়া ডানার ভাঁজে বলে রাখি চুপচাপ—তোমার অভিমানের বয়স হয়েছে, এবার তো থমকে দাঁড়াও।

চারপাশে খুব অভিমানের সুর—তবু তুমি কি দুপুরের নিঃশব্দ হাওয়ার পাশাপাশি একটা পথশিশুর মুখে অনাবিল আনন্দ ফুটিয়ে তুলতে জানো! তাহলে এসো—আমরা সেই অবিকল দুপুরের পথে হেঁটে যাই, যেখানে আমাদের খড়খড়ে স্বপ্নগুলো রোদে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিছু কথা আছে—ভেতরের কণ্ঠস্বর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। বিমূঢ় স্বপ্নের কথা তবু কাউকে বলা যায় না। অনুমিত জীবনের পায়ে ভর দিয়ে কোনোদিন ঠিকভাবে হাঁটতে পারিনি। সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে গেলে চুপসে যাই। এত বিভ্রম রাত্রির নিনাদ এখানে—বহুরাত ঘুম আসে না। গতরাতও বহুকাল চোখ বুজে ভেবেছি—কেন ভেতরের ক্লেদগুলো ক্রমাগত জমা হচ্ছে অপূর্ণ জীবনের পৃষ্ঠায়! কোনো উত্তর নেই।

এ দেখো, আমার বুকের ভেতর হাহাকার। রাতের করুণ চোখে তুমুল জলপ্রপাত। কোনোদিন বলিনি—বারবার এই হারিয়ে যাওয়ার উৎপীড়ন আর ভালো লাগে না। তুমি কি জেনেছো—কেন এমন জীবনের পায়ে ঝিম মেরে বসে থাকি সারারাত। সকাল তো চিরকাল সুন্দর। শুক্রবারের মোহগ্রস্ত হাওয়া আরও উদ্বেলিত জীবনের কথা বলে। তবু ক্রমশ ধেয়ে আসে রূপান্তরিত পৃথিবীর আটখানা শীৎকার। ও মেঘমন্দ্র ঝরো হাওয়ার দল! ও বৃষ্টির উগরে দেয়া জল! এসো এইখানে, দূরের শালবনে—নিমীলিত দৃষ্টির সীমানায় অজস্র স্বপ্ন শুয়ে থাকে শুক্রবারের মুগ্ধতায়।

সে যেন ভাবছে—আমি বদলে যাচ্ছি প্রতিদিন। ক্রমাগত স্রোতের সাথে পাল্টে যাচ্ছে আমার জীবন—না। আমি আমার মনে বেঁচে আছি—আমার দিগন্তজুড়ে কতকিছু খেলা করে। তবু নিশ্চয়ই একদিন ভুলে যাব এতসব নীরব শব্দের কোরক। তবু সত্যিই—একদিন জীবনের অদূর মোহনায় ভেসে যাব।

বালিয়াড়ি ঝাউবনে নিশ্চয়ই সেদিন শুক্রবার।

আমাদের স্বপ্নগুলো উড়ে যায় জীবনের জরাজীর্ণ কলেবরে। তাই যদি সত্যি হয়—তবে কেন এমন অজস্র পাতা ঝরে পড়ে বিকেলের মৃদু হাওয়ায়। তুমি যখন কথা বলো—থমকে যায় গোপন প্রতিবেশ, তোমার চোখে শ্রাবণের কুয়াশা। আর আমাকে বলে বেড়াও—মিথ্যে অভিমান। শুক্রবার এলেই কেমন যেন সমস্ত অতীত ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে মেহেরুন নেসার একমাত্র চোখ আর সংকুচিত মনের অনুতাপ। সে কি জানে আমার মনের ভেতর আমাদের অতীতগুলোই ফিরে ফিরে আসে আর আমি প্রতি শুক্রবার সেই বৃক্ষের গোড়ায় পানি ছিটিয়ে দিই যেন সেই অতীত-বৃক্ষ আরও বহুবছর বেঁচে থাকে!

আজ বৃহস্পতিবার—তবু শ্রাবণের ঘুমঘুম অনুরণন। আবার রোদের পরতে পরতে আশ্চর্য ছায়া। এমন বৃহস্পতি বিকেলে আমার খুব বিষণ্ণ লাগে, চারদিকে মুহুর্মুহু কলতান। যদি তুমি দূরমগ্ন বৃহস্পতির ডানায় ফিরে আসো এখানে—আমার খুব ভালো লাগবে। আমার বুকের ভেতর একটা কাঠঠোকরা পাখি ডানা ঝাপটে ভীষণ উড়ে বেড়ায় আজ। তারপর বিষাদপুরের অন্তহীন শূন্যতায় চোখ ফেলে তাকিয়ে থাকি আর আমার মনে তখন আরও হুহু হাওয়া বয়ে যায়—সন্ধ্যার কালো আকাশ রূপান্তরিত হয় এবং আমি ফিরে আসি, ফিরে আসি উদ্যত জানলার পাশে।
—তুমি কি জানো আমার চোখ কথা বলে?
—হ্যাঁ, প্রতিটা মানুষের চোখেই ফুটে থাকে পতনোন্মুখ পাতার শব্দ এবং বেঁচে থাকার আয়ুকাল এবং তোমাকে না বলা সতত সংলাপ।

আগস্টের শোকাবহ দিনগুলো ফিরে আসছে... আর আমি প্রতিরাতে উপবাসী যন্ত্রণায় ঘুমোবার চেষ্টা করি, কিন্তু ঘুম আসে না। এপাশ-ওপাশ ফিরে কাতরে উঠি—কখনো অজানায় চোখের পলক ভিজে ওঠে। বস্তুত, পৃথিবীর এই আকাল দিনে কেউ ভালো নেই, তাই নিজের সাথে কথা বলি। যা-কিছু নিজের সাথেই ঘটে যাক। আজ মন্দ হলেও আগামীকাল নিশ্চয়ই সুষম আবহ বয়ে আনবে।

—খুব ভাব জমেছে তোমার—প্রতি বছর আগস্টের শুরুতে কি এমন হয় যে আমাকে বলা যায় না!
—আমি বলব না কোনোদিন, কাউকে বলব না। এ আমার ব্যক্তিগত জীবনের সারাৎসার। গতকাল কতজনকে চিঠি লিখলাম, প্রতিত্তোর তো পেলামই না, বরং কাউকে দুঃখের কথা বললে সে দ্বিগুণ দুঃখের কথা শুনিয়ে দেয়। আর বলব না কিচ্ছু।
—আমাকে বলো প্লিজ।
—আই কান্ট টেল এনিথিং। একরাতে সত্যিই সত্যিই কোনো ঘুমঘুম স্টেশনে গৃহহীন মানুষের সাথে ঘুমিয়ে পড়ব। তারপর অচেনা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাব—তারপর কোথায় যাব জানি না, ট্রেনের বগিতে উঠে আবার অচেনা কোনো স্টেশনে নেমে যাব। এই বাউণ্ডুলিপনাই আমার কাছে আপাতত জীবন।
—এইসব পাগলামি, পাগলামি করে জীবন চলে না।
—পাগলামিই জীবন—পাগলামি না করে জীবনের মানে খোঁজে পাবে না তুমি, একথা মনে রেখো।
—তুমি আমার চোখ দেখো—তোমার প্রতি আমার করুণা হয় খুব। মায়া মায়া ঘ্রাণ আমি ভুলতে পারি না।
—আমি করুণা চাই না—আমার প্রতি কারো কোনো মায়ার ঘ্রাণ থাকুক, তাও চাই না। তুমি দূর হও প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না। লিভ মি অ্যালোন।
—একা একা কতদূর যেতে পারবে তুমি?
—বহুদূর, অন্তত তোমার চিন্তারও অতীত।
—তোমার কাছে এই-ই জীবন?
—হ্যাঁ, আমার কাছে জীবন মানেই মুক্ত হাওয়ায় বাধাহীন ওড়াউড়ি। এইসব রীতিনীতি আমার ভালো লাগে না।
—তুমি কে, তোমার তো আসলেই খুব ভাব জমেছে।
—আমি কেউ না, পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বালুকণা বলতে পারো।

তারপর তুমুলগ্লানি জড়িয়ে ধরে—আমি ঘুমিয়ে যেতে চাই, ঘুমিয়ে যাই ঘুমঘুম স্টেশনে।

প্রিয় জীবন—আমি একা একা এইসব অসুখের দিনে খুব কাতরাতে থাকি—মনের যাতনাও ফেঁপে ওঠে তখন। আমার ভালো লাগে না। এক টুকরো সুখের দিন কি আর ফিরবে না! তুমি এমন শুকনো পাতার মতো নিস্তেজ হয়ে গেলে কেন! আর বলতে ইচ্ছে করছে না—আমার বন্ধুদের কথা, প্রিয় মানুষদের কথা—আমার এই ট্রমাটিক জীবনের সন্নিকটে কেউ নেই। আমাকে জিজ্ঞেস করবার মতো কেউ নেই যে একটু কাছে এসে বলবে, ভালো আছি কি না। দূরের হাওয়ারা কেন এত উন্মাতাল আজ।

প্রিয় জীবন—আমি বারবার, গভীর নিঃশব্দ প্রার্থনায় তোমার সাথে ফেলে আসি প্রেমিকার স্মৃতি—বন্ধুর নিরেট সৌজন্যতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধূর্ত ইবলিশের হাসি।

যখনই নতুন কোনো জীবনের স্বপ্ন দেখি—তখনই তুমি পুরোনো হেঁয়ালি পাখির ডানা ঝাপটে উড়ে আসো আমার মরমি জীবনের পাশে। অথচ তা আমি চাই না। কোনোদিন বলিনি—আমাকে ভালো রেখো। গতরাতে সব মুছে দিলাম, সব। আবারও শুরু করছি। কার কি আসে যায় আমার এমন পাগলামো অভিমানে! আমি তোমার কাছেই ফিরে আসি সময়ের অলিন্দে ফুটে ওঠা খুব অচেনা জীবন। কেউ আছো? কেউ কি আমার যান্ত্রিক জীবনের পাশে একটু দাঁড়াবে?

সারাদুপুর খুব ক্লান্ত লাগে—মনের ভেতর অবসাদ। তবু আমাদের উঠোনজুড়ে মেহগনির অজস্র পাতা। বহুদূর সাইকেল—আমি ফিরে যেতে চাই সেই পুরোনো দিনের কথায়, পুরোনো দিনের দুপুর। তোমার হেঁটে যাওয়া পথজুড়ে আজ ডেউয়া ফলের গান।

আমাদের এই বেঁচে থাকা। আমাদের এই করুণ সন্ধ্যার কাছে নতজানু জীবন। কেউ পাশে নেই—প্রতিদিন নিজের সাথেই কথা বলি একা একা।

—তুমি কি কোনোদিনই বুঝবে না আমার চিন্তার অবাধ কুশলতা?
—বুঝতে চাই প্রিয়তম—কিন্তু পারি না। তোমার নরম কথার মায়া আমাকে বারবার বিভ্রান্ত করে তোলে।
—এমনটা কথা ছিল না আমাদের।
—কতকিছুই তো হওয়ার কথা ছিল। কত কি স্বপ্নের বিচরণ।
—তাই যদি হয়—চলে যাও বহুদূর।

আরও পড়ুন

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া

গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

যেকোনো প্রস্থানই অনন্ত বেদনার ছায়া ফেলে চলে যায়। কলকাতা বইমেলার পর্দা নেমে গেল আজ, কী অবাক শীত-শীত আচ্ছন্নতা চারদিকে—কতজন, কত মানুষের সঙ্গে বন্ধুতা হলো। কী হবে? এই হতচ্ছাড়া ছোট্ট পাথরটাকে কতজনই তো ছেড়ে গেছে। একাকি নিছানো অন্ধকারে মুখ থুবড়ে কতদিন কেঁদেছে সে। খুব ক্লিশে যন্ত্রণা। তবু এই চেনা-চেনা মানুষগুলো আমার হৃদয়ে একটা মীনরঙ্গ পাখি হয়ে বহুদিন বেঁচে থাকবে।

মানুষের কাছাকাছি না গেলে কখনোই মানুষকে আবিষ্কার করা যায় না। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলি—অনেককিছু শেখা যায়, কৌতূহলী না হলে কখনোই ভিন্নতর সৃষ্টির গতিপথ তৈরি হয় না। আমি কলকাতার প্রায় দু’মাস যাপনের দিনগুলোতে প্রতিদিনই কিছু না কিছু শিখেছি, কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো দীঘির পাড়ে পাতানো বেঞ্চে বসে, প্রায় দেখেছি একটা অন্ধ লোকের সঙ্গী একটা নিরীহ কুকুর, যে তাকে পথ দেখায়, বন্ধুর মতোই আগলে রাখে।

We live in a wonderful world that is full of beauty, charm and adventure. There is no end to the adventures we can have if only we seek them with our eyes open.

–Jawaharlal Nehru

আমি এক নতুন পৃথিবী-কে দেখতে চেয়েছি। চোখ-কান খুলে তাকানো নয়, মনের দুয়ার খুলে, শিরধার উঁচু করে তাকাতে চেয়েছি চারপাশে—পাহাড়, সমুদ্র বা আকাশের পাটাতন থেকে খুবলে নিতে চেয়েছি মনের সমস্ত অশুভ দর্পণ।

কী হলো—রাস্তাপারাপারের সময় কার আঙুলের সাথে যেন আমার আঙুল ছুঁয়ে গেল—তার চোখের দিকে চোখ পড়তেই কী অদ্ভুত মায়া খসে পড়ল করুণাময়ী মেট্রো স্টেশনে। আমি সেই দু'খানা আবেগ নিয়ে ফিরে এলাম।

দীপ শেখর চক্রবর্তী, আমার প্রিয় দীপ’দা। মুন্নী সেন, শুভদীপ নায়ক আর শিপ্রা মালাকার, শেষ সময়ের সান্নিধ্য আমাকে এত আনন্দ দিয়েছে আজ। ফেরার পথে শুধু মনে পড়েছে খানিক আগেই তো কিছু একটা ছিল, এখন একেবারেই সুনসান নীরবতা।

তবু যদি—আবারও দেখা হয়ে যায়, কোনোকোনো খেয়ারি সন্ধ্যায়। জীবনের জলপ্রপাত কেবলই নিজেকে জানার। সবকিছু অতিক্রম করে নিজেকে ভালোবাসো, নিজেকে জানো প্রিয়তম বন্ধু, কোনো ভয় নেই, কোনো সঙ্কোচ নেই।

২.

কী হলো—পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে না তোমার হস্তরেখায় কে যেন বলেছিল একটা শিশুজন্মের মতো অকথ্য বেদনাবহ সময় তোমারও আসবে। ঠিক তা নয়, হয়তো আমিই আমাকে বলেছিলাম ঘোর স্বপ্নে, এক অজানা বিন্দুবৃত্তের ভেতর। জরাজীর্ণ, লক্ষ্যচ্যুত, অনুতাপ, বেদনা, ক্রমাগত বিচ্ছিন্নতা, বিমর্ষ, কলহ, জঞ্জাল আর এত এত হইহুল্লোড় কখনোই আমি চাইনি।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কি অপলক দৃষ্টি—আমিই আমাকে দেখতে পাচ্ছি, ঠিক ভেতর-বাইরের অবক্ষিপ্ত নীরবতা যেন। কতদিন নিজের সঙ্গে কথা হয় না। তুমিও দেখো, নিজেকে, ভাবো—কেমন আছো? এদিকটায় খুব শৈত্যপ্রবাহ আজ, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো, আয়নার নির্জনতার চেয়ে আর কোনো বিভোর শ্রোতা নেই।

৩.

বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে এলেও মন প’ড়ে থাকে মোহাম্মদপুরের গলি-ঘুপচিতে। ঢাকার তল্লাটে পাথরখচিত রাত ঘিরে চিররহস্যের ঘূর্ণনে সন্ধ্যার উপচে পড়া ভিড় ঠেলে যেন আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক আসাদগেট মোড়ে। কিন্তু না, আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে। শান্তিপার্কের ছোট্ট বাসাটা গত দেড়মাস ধরে আমার আশ্রয়, সারাদিন কিছু না হলে লেপটেসেপটে শুয়ে থাকি, জানলার পাশে বসে বই পড়ি, ছোট্ট জানালা খুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকি, কী বিস্ময় লাগে! কী অদ্ভুত এ আকাশ!

কলকাতায় আসার পরদিন থেকে দুর্দান্ত কিছু বই সংগ্রহ করেছি। কলেজস্ট্রিট গেলে খালি হাতে আর ফেরা হয় না। সেই পুরোনো অভ্যেস মস্তিষ্কে ঠেসে গেছে। সেদিন কলকাতা বইমেলায় দীপ’দা, মানে প্রিয় দীপ শেখর চক্রবর্তী’র সঙ্গে এতটা দারুণ সময় কাটিয়েছি। গত দেড় মাসের সবচেয়ে ভালো দিন ছিল আমার জন্যে। তারপর থেকে আজও অব্দি রুম থেকে বেরোয়নি আর, বাইরের এইসব হট্টগোল আমার ভালো লাগে না। যদিও আমাদের কলোনিতে কি যেন অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য আছে—মানুষের নরম ভাষা, হলুদ আলোর করতালি আর একাকি বিষণ্ণ মানুষের নির্জীব কান্না।

দূর জীবনের এ কেমন পরাভূত হাওয়া! বলো।

পুরোটা পড়ুন
শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা

শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা

গদ্য | ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শতাব্দীর স্মৃতিচিহ্ন কখনো এরকম এক ঘোরলাগা সময়ের সাথে ছায়াচ্ছন্ন সবুজ অথচ বিবর্ণ দেয়ালঘেঁষা কলকাতার মুখর গলিগুলো আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছে। সেই কবে এসেছি, এখনো বেরোয়নি সেভাবে। লিটলম্যাগাজিন মেলায় খুব গোছানো আয়োজন দেখে মন ভালো তো হলো কিন্তু লিটলম্যাগ নিয়ে আমাদের বাংলা একাডেমির কঞ্জুসপনা আমাকে প্রতিবারই হতাশ করে।

ব্যক্তিগত স্বর, সংস্কৃতি, কবিতা আর ফেনিল বৈঠক সেরে কতিপয় কবিবন্ধুদের সঙ্গে আজকের মতো আলোচনা শেষ হলো। দেবারতি মিত্রের প্রয়াণ খুব গভীরভাবেই আমাকে আহত করেছে। কিছুদিন আগেই তার লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল।

২.

শান্তিপার্কের চারতলার ছোট্ট একটা রুমে আমি, আমার মামাতো ভাই গাদাগাদি করে আছি প্রায় মাসখানেক হলো। কয়েকদিন পেরিয়ে যায় আবদ্ধ রুমে, আমাদের রুমের ছোট্ট জানালা থেকেই আকাশের অবাক করা খণ্ডাংশ চোখে পড়ে, পাশের বিল্ডিংয়ের বেলকনি, ছাদে টানানো রশিতে ঝুলে থাকা নানান রঙের পোশাক, ছাদের কার্নিশে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বৃক্ষচারার টব, তাহলে আমি বাইরে বেরিয়ে কোথায় যাব যদি জানালা খোললেই এত মুগ্ধতা ঘনিয়ে আসে।

৩.

একদল অসুস্থ শুয়োর ছড়িয়ে আছে আমার চারপাশে। যারা আমার পথ আটকাতে চায়—ওদের জুতোটপেটা করে বিতাড়িত করলাম আজ। ‘ক্ষতিকারক সবকিছুই বিতাড়িত করতে হবে জীবন থেকে’ এক বিদগ্ধ মনীষী একদা বলেছিল আমাকে।

৪.

এ কোন অশালীন শীত নেমে এলো সারা কলকাতায়—আমার হাত-পা জমে যাচ্ছে। হলুদ আলোয় একপাল অনুগামী তরুণদল তাদের বৃত্তের ভেতর হাঁটছে। অথচ আমার শিথানে গদ্যের অপূর্ব ব্যঞ্জনা।

পুরোটা পড়ুন
ট্রেনের কামরায় হুবহু’র পথচলা

ট্রেনের কামরায় হুবহু’র পথচলা

গদ্য | ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অনেকেই হয়তো হুবহু সম্বন্ধে জানতে চায়—অনেক প্রশ্নও জমা হতে পারে, মনে হতে পারে এ আবার কেমন নাম! হুবহু! কিন্তু হুবহু প্রথম সংখ্যা ছেপে আসার পর গড়গড় করে হাজারখানেক কপি ফুরিয়ে গেল কয়েকদিনেই! সম্পাদক হয়ে আমার নিজেরই চক্ষু চড়কগাছ! কেননা, আমি পূর্বে ‘বেয়ারিং’সহ বেশ কয়েকটা লিটলম্যাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। বেয়ারিং আমাকে যেটুকু পরিচিত করেছে, যেটুকু সমাদৃত করেছে, হুবহু’র হয়তো সেই সময় এখনো আসেনি। কিন্তু হুবহু শুরু থেকেই আমাকে বেশ পরিতৃপ্ত করেছে। বেয়ারিং নিয়ে এখন আর তেমন ভাবনা নেই। আপাতত চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে। আগামীকালের ভাবনা সম্পর্কে বলতে পারছি না।

তো, আমি যখন কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী তরুণের সঙ্গে কমলাপুর থেকে চিটাগং মেইলে চড়ে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। তখন হঠাৎ করেই বহুদিনের জমে থাকা একটা পরিকল্পনা তাদের জানালাম। তারা সবাই আমাকে সাহস দিল, তারা বলল অন্তত তাদের জন্য হলেও যেন কাজটা শুরু করি।

হুবহু প্রকাশ হবার পর থেকে এত এত মানুষ আমাদের প্রশংসা করেছে—শুধু দিনলিপি নিয়ে পূর্বে কোনো কাজ হয়নি, ওপার বাংলার মানুষেরাও আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছে এর জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততার ফলে হুবহু-কে নিয়মিত সময় দিতে পারছি না বলে আমারও যে দুঃখ হয়।

হুবহু’র শুরু থেকে আজ অব্দি আমার সঙ্গী ছিল এফাজ মোবারক এবং তাশরিফ মাহমুদ। ওদের মতো চঞ্চল তারুণ্য পেয়ে আমি আনন্দিত। সর্বোপরি সবার জন্যই অনেক অনেক ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।

*লেখাটা কেমন যেন ছাড়াছাড়া। শুধু লিখতে হবে তাই লিখলাম, নয়তো আরও পরিমার্জনা করা যেত। ধন্যবাদ।

পুরোটা পড়ুন